NursingadmissionacademyPostAd

😱 বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ইতিহাস: দেশে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূকম্পন ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা

😱 বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ইতিহাস: দেশে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূকম্পন ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বেশ কিছু স্বল্প থেকে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলেও, দৃশ্যমান কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সবসময়ই ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। কেন বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ? মূলত টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান হওয়ায় আমাদের দেশে প্রায়শই ছোট-বড় ভূকম্পন অনুভূত হয়। যদিও নিকট অতীতে কোনো ভয়াবহ ভূমিকম্পের স্মৃতি নেই, দেশের কয়েকশো বছরের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে বেশ কিছু বিধ্বংসী **ভূমিকম্পের ইতিহাস**। বিভিন্ন নথি ঘেঁটে পাওয়া সেইসব বড় বড় ভূমিকম্প ও এর **ক্ষয়ক্ষতি** নিয়েই এই আলোচনা।

bangladeshi-bhukomper-itihas

প্রাচীনতম ভূমিকম্পের বিবরণ ও প্রথম রেকর্ড

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রথম বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় ১৫৪৮ সালে। এই ভূমিকম্পের ফলে বর্তমান চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে মাটির নানা জায়গায় ফাটল সৃষ্টি হয় এবং দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। সেই ফাটল থেকে দুর্গন্ধযুক্ত কাদা-জল বের হওয়ার তথ্যও নথিতে পাওয়া যায়।

পরবর্তী শতকে, ১৬৪২ সালে আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার কারণে সিলেট জেলার বহু দালান-কোঠা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

১৭৬২ সালের প্রলয়: ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ভূকম্পন

বাংলাদেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হওয়া অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পটি ঘটেছিল ১৭৬২ সালের এপ্রিল মাসে। 'ইস্টার্ন বেঙ্গল অব চিটাগং'-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ভূকম্পনে চট্টগ্রাম জেলার অনেক স্থানে মাটি ফেটে প্রচুর পরিমাণে কাদা এবং জল ছিটকে বেরিয়ে আসে।

vumikompo niye mijanur rohoman ajaharir status

১৭৬২ সালের ভূমিকম্পের প্রভাব ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

  • 'পর্দাপন' নামক একটি বড় নদী শুকিয়ে যাওয়ার বর্ণনাও নথিতে পাওয়া যায়।
  • 'বাকুর জনক' নামক এক অঞ্চলে প্রায় দুইশো মানুষ তাদের গৃহপালিত প্রাণীসহ সমুদ্রের গভীরে পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়েছিল।
  • ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে ভূখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় অতল গহ্বর সৃষ্টি হয়। মাটির নিচে কয়েক হাত গভীরতা দেবে গিয়ে কিছু কিছু গ্রাম সম্পূর্ণভাবে পানিতে ভেসে গিয়েছিল।
  • কথিত আছে, এই ভূমিকম্পের প্রভাবে সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে দুটি অগ্নিশিখা উৎপন্ন হয়েছিল।
  • জেমস টেইলরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বিভিন্ন নদী ও ঝিলের পানিতে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পানির স্তর সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক উঁচু হয়ে গিয়েছিল। ভূকম্পন শান্ত হলে অসংখ্য মরা মাছ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

১৮০০ শতকের বড় ভূমিকম্পের বিবরণ

উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও কম্পনের কেন্দ্র

  • ১৮১২ সাল: এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সিলেটে, যেখানে বেশ কিছু বাড়িঘর এবং দালান-কোঠা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
  • ১৮৫৫ সাল: বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৫ সালের ভূমিকম্পটি ঢাকার আশেপাশে অঞ্চলে অনুভূত হয়েছিল।
  • ১৮৬৫ সাল: শীতকালে আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের বর্ণনা পাওয়া যায়।
  • ১৮৬৯ (বেঙ্গল আর্থকোয়েক): এই ভূমিকম্পটি মানিকগঞ্জে আঘাত হানে এবং এর মাত্রা ছিল প্রায় ৭.০। এর তীব্রতা ভারত, সিকিম, মণিপুর এবং মিয়ানমার পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল।

১৮৯৭ সালের 'গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক' - এক নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ

১৮৯৭ সালের ১২ জুন সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পটি ইতিহাসে **'গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক'** নামে পরিচিত। এর মূল কেন্দ্র ছিল আসামের শিলং মালভূমির কাছাকাছি। ভূমিকম্পের স্থায়িত্বকাল ছিল ৬ সেকেন্ড থেকে ৫ মিনিট পর্যন্ত।

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা প্রতীকী চিত্র

ব্যাপক প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি

  • সিরাজগঞ্জে উপবিভাগীয় অফিস, কারাগার, ডাকঘরসহ নানা সরকারি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছিল।
  • একটি পাটের ব্যাগের ফ্যাক্টরি পুরোপুরি ধূলিসাৎ হয়ে যায়, ফলে কোম্পানিটি ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
  • ভূ-পৃষ্ঠের নানা স্থানে ফাটল ধরে, এবং ভূতল থেকে উঠে আসা পলিমাটি আর বালিতে অনেক কুয়া ভরে গিয়েছিল।
  • এই ভূমিকম্পে শুধু সিলেট জেলাতেই প্রায় ৫৪৫ জন মানুষ মারা গিয়েছিল।
  • ঢাকা ও ময়মনসিংহের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
  • তৎকালীন হিসাবে, অর্থ-সম্পত্তির ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা

বিংশ শতকের উল্লেখযোগ্য ভূকম্পন

প্রধান প্রধান ভূমিকম্প

  • ১৯১৮ (শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প): প্রায় ৭.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্প মিয়ানমার ও ভারতের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল।
  • ১৯৫০ (আসাম ভূমিকম্প): ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল প্রায় ৮.৭, যা ছিল বিংশ শতকের অন্যতম বৃহৎ ভূকম্পন।
  • ১৯৯৭: ১৯৯৭ সালের ২২ নভেম্বর চট্টগ্রামে ৬.০ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল।
  • ১৯৯৯ (মহেশখালী ভূমিকম্প): বিংশ শতকের শেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প এটি। ৫.২ মাত্রার এই ভূকম্পনের কেন্দ্র ছিল মহেশখালী দ্বীপ, যেখানে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

উপসংহার: ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা

বাংলাদেশের **ভূমিকম্পের ইতিহাস** পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার রেকর্ড পুরনো। যদিও বিগত কয়েক দশকে বড় কোনো বিপর্যয় ঘটেনি, বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই **ভূমিকম্পের ঝুঁকি** নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন। অতীতে ঘটে যাওয়া এই **বিধ্বংসী ভূমিকম্পগুলো** প্রমাণ করে যে যেকোনো সময়ই বড় ধরনের বিপদ আসতে পারে। তাই ভূমিকম্প থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আমাদের নির্মাণ ও নিরাপত্তা প্রস্তুতিতে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড: বাংলাদেশের ভূমিকম্প, গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক, ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি, ভূমিকম্পের কারণ, বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ইতিহাস, শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নার্সিং এডমিশন একাডেমির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url